Light house in Radio Mirchi, Kolkata with Mir
আম্ফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনের ত্রাণকার্য....
বিগত দুই মাস ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ভারত কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ২০২০ সালের ২৩ শে মার্চ (২০২০) গোটা দেশ তালাবন্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এই কঠিন সময়ে যখন প্রশাসন আর দেশের নাগরিকরা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে, তখনই ২০ ই মে একটি সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। বঙ্গোপসাগর থেকে এসে ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি সুন্দরবনের মধ্যে আঘাত হানে এবং সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু ঘণ্টার মধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পরে, চাষের জমি নোনা জলে ডুবে যায়, পুকুর বা জলাশয় গুলোতে নোনা জল ঢুকে পরার ফলে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে যায়। সুন্দরবনের মানুষকে স্বল্প সময়ের এবং দীর্ঘ সময়ের ত্রাণ উভয়ের জন্য সহায়তা করার জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
আমাদের সাংগঠনিক দায় থেকে এবং মানুষের সাহায্য নিয়ে কাজ করার নীতিবোধ থেকে লাইট হাউসের যে কোনও কাজে যতটা সম্ভব সুষ্ঠু, পরিকল্পিত ও অপচয়বিহীন ভাবে শেষ করা সম্ভব সেই চেষ্টা আমরা করে থাকি। এতে সময় লাগে, এতে শ্রম লাগে। এতে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাতে আরও অনেক অসুবিধা এড়ানো যায়। আমফানের মতো বড় কাজে সেই সমস্ত দায়িত্বই আরও অনেক বেশি। অসংখ্য মানুষ অসংখ্য ভাল কাজ করছেন। এত কাজের ভিড়ে এমন একটা কাজ করা অর্থহীন, যে কাজের ফলটুকু সত্যিকারের প্রয়োজনের জায়গায় পৌঁছল না। একইসঙ্গে, সে কাজের ফল যদি কেবলই তাৎক্ষণিক হয়, সেটাও অর্থহীন। তাৎক্ষণিক এক দিনের আনন্দ বিনিময় আমরা প্রায়ই করি। কিন্তু তা এই সুবৃহৎ বিপর্যয়ে যথেষ্ট বা কাঙ্ক্ষিত কোনওটাই নয়।
তাই সেই সময়টুকু আপনাদের কাছে চেয়ে নিয়ে আমরা সুন্দরবনের ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু করেছি। এই যাত্রার শুরু অবশ্য আরও আগেই হয়েছে, আমাদের সংগঠনের দুই সদস্য দু'দফায় রেইকি করে এসেছেন আমফান-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের কয়েকটি জায়গায়। তাঁদের চোখে দেখে বোঝা পরিস্থিতি, স্থানীয় মানুষের দাবি দাওয়া ও আমাদের ক্ষমতা- এই তিনটির ভারসাম্য বজায় রেখে একটা প্রাথমিক ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে সেই অনুযায়ী আমাদের কাজ হচ্ছে।
আমাদের কাজের পরিকল্পনা গুলো এখানে লেখা হল-
১। গোসাবার রাঙ্গাবেলিয়া এলাকা পার করে একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ৫০০টি পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া। এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ছে, অন্তত ১৫ দিনের জন্য তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা। আমাদের পরিকল্পনা ছিল কমিউনিটি কিচেন গড়ে তোলার। কারণ পরিষ্কার কথা, জলমগ্ন এ জীবনে এখন রাঁধা খাবার চাই পেট ভরানোর জন্য। কাঁচা রসদ পেলেও রান্না করার পরিস্থিতি নেই। আমরা সেই পরিকল্পনা সফল করতে পারিনি, কারণ জল। পানীয় জলের মারাত্মক অভাব। হু হু করে নোনাজল ঢুকে নষ্ট করে দিয়েছে সমস্ত পুকুর। ডুবে গেছে নলকূপ। মানুষ অনেক দূর থেকে জল এনে ফুটিয়ে, ছেঁকে খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় এত মানুষের রান্নায় যে জল ব্যবহৃত হবে, তাতে ভুল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যেতে পারে। যতদিন না জল সরে দু-একটি পুকুর নতুন করে ভরছে, ততদিন এ কাজে ঝুঁকি থেকে যাবে।
কিন্তু এই কাজটাও হবে কয়েক দিন পরে, আপনারা পাশে থাকলে।
ফলে আপাতত ওঁদের জন্য ডাল, আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন, মুড়ি, বিস্কুট, তৈজসপত্র, সাবান, ব্লিচিং পাউডার-সহ বেশ কয়েকটি আইটেম মিলিয়ে একটি করে খাবার ও জরুরি জিনিসের কিট তৈরি করে দিয়ে আসা হবে, প্রতি পরিবারের ১৫ দিনের সংস্থান হিসেব। ওঁদের যা যা প্রয়োজন, সেটা জেনে নিয়েই জিনিসগুলির তালিকা তৈরি হয়েছে। চাল বাদ রাখা হয়েছে সচেতন ভাবেই।
জলে সব ভেসে যাওয়ার পরে কিছু পরিবার উনুন গড়তে পেরেছে, কিছু পরিবার পারেনি। যাঁদের উনুন রয়েছে, তাঁদের বাড়িতে খেতে আসছেন অন্যেরা। এভাবেই ভাগাভাগি করে ওঁরা কাজ চালাচ্ছেন এখন। আমরা কয়েকটি বাড়িতে নতুন উনুনেরও ব্যবস্থা করব সম্ভব হলে। দাম বেশি নয়। প্রত্যন্তে বয়ে নিয়ে যাওয়াটাই বেশি অসুবিধার। আমরা নিয়ে যাব। কেনাকাটা পুরোটাই হবে স্থানীয় মানুষেরই কোনও দোকান থেকে। কথা হয়েছে। তাঁর জিনিসও বিক্রি হবে, বণ্টনও হবে। এখান থেকে জিনিস কিনে নিয়ে যাওয়ার খরচটাও বাঁচানো যাবে।
২। এর পরবর্তী পর্যায়ে গোসাবারই ৪০০ পরিবারকে একটি করে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, মশারি, টর্চ দেওয়া হবে। তাঁদের এটাই দরকার বলে জানিয়েছেন। সারা বছরের বস্ত্র-সংস্থান। তাঁরা অন্নের সমস্যায় পড়েননি আপাতত। খাবারটুকু আছে। এই জিনিসগুলোও কালকেই নিয়ে যেতে পারলে ভাল হতো, কিন্তু সম্ভব হয়নি। তাই পরের বার।
৩। তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, গ্রামটির ১২টি পুকুর পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। পাম্পে করে নোনাজল সেচে ফেলে, পরিষ্কার করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন ওঁরাই। এবং এটাই সবচেয়ে জরুরি এই মুহূর্তে। জল নেই। আমাদের সদস্যরাও গিয়ে বুঝেছেন, প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা কী মারাত্মক! পানীয় ছাড়াও রান্না, স্নান বা কাপড় ধোয়ার জলটুকুও পাওয়া যাবে না, পুকুর ছাড়া। পুকুরগুলো আগের অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টা করব আমরা। এ বিষয়েও কী কী করণীয়, তার বিস্তারিত কথা বলে আসা হয়েছে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষদের সঙ্গে।
৪। কয়েক দিনের মধ্যেই মেডিক্যাল ক্যাম্প অ্যারেঞ্জ করতে হবে। জল নামতে শুরু করেছে, এই সময়টা পেটের অসুখ ও অন্যান্য সমস্যা তৈরির জন্য যেন একেবারে আদর্শ। প্রতিটা ঝঞ্ঝা, তুফান, বন্যার শেষেই এটা হয়। নিয়মিত ভাবে। সেখানে সামান্য পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে লাইটহাউস।
৫। বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে সমস্ত জমি ভেসে যাওয়ার ফলে, পরবর্তী চাষবাসের পদ্ধতি সংকটে। নোনাজলে সিক্ত মাটিতে যে ফসল সবচেয়ে ভাল চাষ হবে, সে ফসলের বীজ জোগান দেব চাষিদের। এ বিষয়েও দু'পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে এবং কৃষিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে। এটা একটা খুব আশাজনক এবং সুদূরপ্রসারী কাজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারণ ত্রাণ এবং শুধুই ত্রাণ এই বিপর্যয় সামাল দিতে পারবে না কখনও। এটার মতো সত্য আর দ্বিতীয় কিছু নেই এই মুহূর্তে। ত্রাণের জোগান শেষ হলেও যেন খাবারে টান না পড়ে, তার জন্য কৃষি একটা বড় ভরসা মানুষগুলোর। আমরা চেষ্টা করব।
এই আমাদের আপাতত পরিকল্পনা, আমফান-বিধ্বসিত সুন্দরবন নিয়ে। আপনাদের মতামত স্বাগত। আপনাদের পাশে থাকাও স্বাগত। এখন লকডাউনের সময়ে সকলেরই রসদ সীমিত, আমরা জানি। তাই যে যেমন ভাবে পারেন পাশে থাকুন। এটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ, ফলে আগামীতেও সঙ্গে থাকুন।
যারা এতদিন ধরে আমাদের ভরসা করেছেন, অপেক্ষা করেছেন, বিশ্বাস রেখেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। যাঁরা অন্য কোনওখানে কোনওভাবে সাহায্য করে ফেলেছেন, তাঁদেরও শুভেচ্ছা। দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের ভাল হোক। আমরা সকলেই সেটাই চাই।
আমাদের ঠিকানা রইল নীচে। সাহায্য করার পরে একদম নীচে দেওয়া নম্বরগুলির কোনও একটিতে যদি হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ করে জানিয়ে দেন আপনার পেমেন্ট ডিটেল, আমরা রিসিপ্ট পাঠিয়ে দেব।
Name: LIGHT HOUSE THINK DIFFERENT
Bank: Allahabad Bank
Branch: Elgin Road
A/c number: 50466230986
IFSC code: ALLA0210633
MICR code: 700010023
G-pay: 8100040046
PayTm: 8100040046, 9830918071
এই দুঃসময়ে শুভেচ্ছা রইল আপনাদের জন্য। আমাদের ভাল থাকার চেষ্টা আরও সম্মিলিত হোক, শুভ হোক।
যে কোনও প্রশ্নে বা সাহায্যে আমরা আছি:
+91-9830918071,
+91-9883133183,
+91-9051054310,
+91-8100040046
LIGHT HOUSE -Think different